– একটি প্রতিবেদন

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ ভারতবর্ষের সাথে আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও। আক্রান্তের সংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মহামারীতে মৃতের সংখ্যা। চিকিৎসা পাওয়া, হাসপাতালে বেড পাওয়া এবং অক্সিজেন পাওয়া নিয়ে চলতে থাকে হাহাকার। এই কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল কিছু তরুণ-তরুণীকে। তাঁরা আক্রান্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন অক্সিজেন। যে আক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরী , তাঁকে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় ওষুধ এমনকি পথ্য তুলে দিলেন অসুস্থ মানুষের কাছে। এই তরুণ-তরুণীরা যে রেড ভলান্টিয়ার্স, তা আজ আর কারও অজানা নেই।
মহামারীর সঙ্কটের দিনে রেড ভলান্টিয়ারের সদস্যরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন মহামারীতে আক্রান্ত মানুষের পাশে। তাঁদের অনেকেরই ছিল না পিপিই কিট,

গ্লাভস, টুপি ইত্যাদি সরঞ্জাম যা দিয়ে তাঁরা সুরক্ষিত রাখতে পারতেন নিজেদের। এই অবস্থায় মুক্তমন পত্রিকাগোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয় যাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরী। নবগ্রাম, কোন্নগর, কানাইপুর, রিষড়া এবং হিন্দমোটর এলাকার রেড ভলান্টিয়ার্সদের হাতে মুক্তমন পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া কিছু সুরক্ষা সরঞ্জাম। কোন্নগরের রেড ভলান্টিয়ার্সদের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্যানিটাইজার মেশিন। রেড ভলান্টিয়ার্সদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি নিয়ে অন-লাইন আলোচনার আয়োজন করা হয় পত্রিকার পক্ষ থেকে। এই কাজে যা খরচ হয় তা প্রথমে যুগিয়েছিলেন মুক্তমন পত্রিকা গোষ্ঠীর সদস্যরাই। ধীরে ধীরে অর্থ সংগ্রহে সামিল হতে থাকেন মুক্তমন পত্রিকার কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী।
এইভাবে চলতে থাকে মহামারীতে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ। তারপর মহামারীর প্রকোপ কম আসে, কিন্তু লক ডাউনে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা বাড়তে থাকে। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে যে আর্থিক ক্ষতি মহামারী নামিয়ে এনেছে, মুক্তমন পত্রিকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তার কোনও ব্যতিক্রম ঘটেনি।

মুক্তমন পত্রিকা গোষ্ঠী বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বজোড়া আর্থিক বৈষম্য নিয়ে ধারাভাষ্য রচনা করার প্রয়াস জারি রেখেছে। স্বাভাবিক ভাবে মুক্তমন পত্রিকা গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছে মনে হয়েছে মহামারীর লক ডাউনে যাঁরা জীবিকা হারাচ্ছেন বা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথা। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য রেড ভলান্টিয়ার্সদের সাহায্য নেওয়া হয়, কারণ মহামারীতে আক্রান্ত মানুষের পাশে তাঁরাই ছিলেন। এছাড়া এলাকার কয়েকটি বিদ্যালয়ের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের নাম। এইভাবে শুরু করা হয় কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে এক মাসের রেশন পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচী। প্রথমে রিষড়ার ১২ টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় একমাসের রেশন।
এই কর্মসূচী শুরু করার পর অভূতপূর্ব সাড়া মেলে মুক্তমন পত্রিকার পাঠক এবং গোষ্ঠীর শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে। বহু মানুষ নিজেরাই অর্থ তুলে দিয়েছেন মুক্তমন পত্রিকাগোষ্ঠীর হাতে এই এক মাসের রেশন দেওয়ার কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার জন্য। মুক্তমন পত্রিকা সর্বমোট ১২৫টি পরিবারের কাছে পৌঁছতে পেরেছে এক মাসের রেশন নিয়ে। রেশন প্যাকেটে দেওয়া হয়েছে সরষের তেল, চিনি, তিন ধরণের ডাল, সওয়াবিন বড়ি, ছাতু, সুজি, বিস্কুট, মুড়ি, গুড়ো মশলা, চাউমিন, খেজুর, লবণ সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, টুথ পেস্ট, ইত্যাদি। জুলাই, ২০২১ মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রশাসনিক বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে উঠে যাওয়ায় এবং অর্থনৈতিক কাজকর্ম ধীরে ধীরে শুরু হওয়ায় রেশন দেওয়ার কর্মসূচী গুটিয়ে নেওয়া হয়। যাঁরা প্রায় অযাচিতভাবে অর্থপ্রদান করে পত্রিকাগোষ্ঠীর উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই মুক্তমন পত্রিকার।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আর্থিক দুর্দশা তথা মহামারীতে জীবিকা হারানো মানুষের কথা তুলে ধরার জন্য ‘অতিমারির পটভূমিকায় অসংগঠিত শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের কাঠামোগত পরিবর্তন এবং প্রভাব’ নামে একটি সমীক্ষা শুরু করছে মুক্তমন। লকডাউনের অভিঘাত সাময়িক বা স্থায়ীভাবে কাজ হারানো পরিবারগুলির উপর কীভাবে প্রভাব ফেলেছে তার হদিশ করাই হবে এই সমীক্ষার লক্ষ্য। হুগলী জেলার রিষড়া, কোন্নগর ও উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভা এবং রিষড়া, নবগ্রাম ও কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলির মধ্যে ১০০-টি পরিবারকে আনা হবে এই সমীক্ষার আওতায়। এই সমীক্ষার রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপিকা দেবজানী ভট্টাচার্য ও দমদম মতিঝিল কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপিকা ঈপ্সিতা সেন। এই সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে মুক্তমন প্ত্রিকায়। উল্ল্যেখ থাকুক, অবশিষ্ট তহবিলের একাংশ ব্য়য় করা হবে এই সমীক্ষার কাজে এবং অবশিষ্টাংশ হাতে রাখা যেতে পারে সম্ভাব্য তৃতীয় তরঙ্গের মোকাবিলায়।
মুক্তমন পত্রিকার সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও অর্থদাতাদের জ্ঞাতার্থে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হল।





Categories: Uncategorized
Formidable effort. Go ahead.
LikeLike